বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

খোলা হাওয়ায় ছুটি শেষে

তুষার আবদুল্লাহ:

বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলতেই জলধারা। ঘরের প্রান্তসীমায় থাকা গন্ধরাজ, জুঁই, টগর ভিজে যাচ্ছে। বারান্দা ঘেঁষা বৈদ্যুতিক তারে কাক এসে বসলো। পরিচিতই মনে হচ্ছে। তবে একলা কেন? অন্যদিন এসময়টায় সঙ্গী-সাথি নিয়ে এসে হট্টগোল পাকিয়ে দেয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই। আমার ঘুম না ভাঙানো পর্যন্ত তাদের প্রাতঃরেওয়াজ চলতে থাকে। গত চার কুড়ি দিনে দেখেছি নিজেরা একাই নয়, আরও পাখপাখালি নিয়ে আড্ডা জমাতে। ঘুম থেকে উঠে প্রাতরাশের টেবিলে সময়মতো বসতেই হবে। দেরি হলে ওদের হুল্লোড় শুরু। কারণ আমাদের প্রাতরাশে বিলম্ব মানে, দেরি হয়ে যাচ্ছে তাদেরও। খাবার ঘরের পাশের নিম গাছে দোয়েল, ঝুঁটি শালিক, কোকিল, চড়ুই, টুনটুনি, মাঝে মধ্যে তাদের আরও কত আত্মীয়রা এসে তাকিয়ে থাকে আমাদের খাবারের দিকে। চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতেই হৈ হৈ করে উড়ে চলে যায়। চার কুড়ি দিনে এই উৎসবই দেখছিলাম। আমরা প্রাতরাশ সেরে ছাদের উদ্যানে গিয়ে দেখি ওরা তৈরি। গাছের ডালে ডালে, ফুলের শাখায়, বাঁশের মাচায় বসে আছে। অপেক্ষা কখন ওদের খাবার দেওয়া হবে। কাক, দোয়েল, চড়ুই, শালিক সবার জন্য আলাদা থালা। কী শৃঙ্খলা! কেউ কারও থালায় এসে ভাগ বসাবে না। আজ ছাদে উঠেছিলাম প্রাতরাশের আগেই। দেখে আসতে কে কে ফুটলো আজ। দুটো পার্বতী আর টগর ফুটেছে মাত্র। সাদা জবা নেই আজ। টিভির ডিশে বসে আছে একলা একটি কাক। বাকিরা কই? ভাবলাম প্রাতরাশের সময় নিশ্চয়ই ফিরবে ওরা। না ফিরলো না। দু’জনে একলা প্রাতরাশ সেরে ওপরে উঠি। আমাদের হাতে ওদের খাবারের থালা।

এই সময়টায় পাড়া চুপচাপ হয়ে ছিল গত প্রায় আড়াই মাস। মানুষের হৈচৈ কম। শুধু পাখপাখালির কথোপকথন। ওদের ফিসফিস করে বলা কথাও শুনতে পেতাম। আজ বাইরে বড় আওয়াজ। হকার, গাড়ি, মানুষের চিৎকারে পাঁচতলায় টিকে থাকাই মুশকিল। অন্যদিকে অঘোষিত লকডাউনেও ছুটির ফুর্তি আমেজ থাকলেও, আমাদের দিকে এতটা ছিল না। আজ যেন ছুটি শেষে সবাই পথে নেমে এসেছে। উঁকি দিয়ে দেখি মানুষে মানুষে মোলাকাত। এতদিন পর গলিতে হকার পেয়ে কেউ কেউ যেন আবেগে আপ্লুত। কত ঘনিষ্ঠ হয়ে কেনাবেচা করা যায় তার মহরত চলছে। যাদের এতদিন ছাদ, জানালা বা বারান্দায় দেখেছি মাস্ক মুখে, পথে নেমে এসেছে মাস্ক ছাড়াই। পাখপাখালিদের না পেয়ে মন খারাপ করেই অফিসের পথে বের হই। পথের যে চিত্র দেখলাম, তার নাম কি দেওয়া যায় ‘ছুটির শেষে’? দীর্ঘ রমজান বা গ্রীষ্মের ছুটি শেষে বিদ্যায়তনে যে আনন্দ নিয়ে যেতাম, মানুষ বুঝি তেমন আনন্দ উদযাপনেই পথে নেমেছে। এমন আনন্দ খানিকটা ঈদের দিনেও দেখেছিলাম। কিন্তু আজ যে মহাআনন্দ। তবে কাল কী হবে? কালতো সব সত্যিই খুলে যাচ্ছে। যাদের পথে দেখছি কেউ স্বাস্থ্যবিধির ঘেরাটোপে নেই। চলছে যেমন খুশি তেমন করে। সেলুনে, মুদিতে, সুপারশপে মানুষ ফিরে গেছে আগের দিনে। রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যক্তিগত বাহন এবং যিনি হাঁটছেন, তারা সকলেই যেন ফিরে যেতে চাচ্ছেন করোনা পূর্ব দিনে।

অথচ এখন করোনাকাল চলছে। পৃথিবী কোনোভাবেই আর করোনা পূর্বকালে ফিরে যেতে পারবে না। কবে করোনা পরবর্তীকাল আসবে তাও অজানা এই মুহূর্তে। দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এখন দিনে আড়াই হাজার শনাক্ত হয়। মৃতের সংখ্যা প্রায়ই বিশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ব্যক্তিগত ও সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচিতজনরা বিদায় নিচ্ছেন। আজ সকালেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া কত পরিচিতের কথা জানলাম। মৃত্যুর মিছিলে মানুষ যখন একটি সংখ্যায় পরিণত হলো, তখন আমরা কীসের নেশায় পথে নামলাম, ইতি টানলাম ছুটিতে? অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কথা বলা হচ্ছে। মৃত্যুর চূড়ায় উঠে কেন অর্থনীতিকে চনমনে করার কথা ভাবা হচ্ছে। ঝুঁকি নিলে বৈশাখ আর রমজানে নিলেই হতো। তখন আক্রান্ত ও মৃত্যুর অঙ্ক কম ছিল। এবং সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীর সারা বছরের ব্যবসার মূল মুনাফা বা বিনিয়োগে উঠে আসে এই সময়টায়। তারপর না হয় আমরা ছুটিতে যেতাম। ঈদের পর অর্থনীতি এমনিতেই ঝিমুনিতে থাকে। তখন কেন তাকে সতেজ করার চেষ্টা। বাজেট ঘোষণার পর জুনের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতো। অনেক অর্থনীতিবিদের এমনই অভিমত।

তরুণদের অনেকে জানতে চান, আচ্ছা করনোকালে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ কেউ ফেসবুকে হাস্যরস করছেন লেখা ও বলাতে। সেখানে করোনাকাল পেরিয়ে বাংলাদেশ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, তা নিয়ে তাদের কোনও ভাবনাচিত্র নেই। সরকারের সমালোচনাই করতে হবে এমন দায়তো কোনও বুদ্ধিজীবীকে নিতে বলিনি। সরকার, জনমানুষ কি পথ অবলম্বন করতে পারে এই সংকটকালে সেই ব্যবস্থাপত্রও তো তারা দিতে পারতেন। আর একটি বড় অংশতো বিত্তশালীদের মতো উড়োজাহাজ নিয়ে উড়ে গেলো কিনা বুঝতে পারছি না। আফসোস করে তারা বলেন, এদের কল্প-স্বপ্নতে ভুলে বইয়ের আলমিরা ভরাট করেছি, বইমেলায় হেঁটেছি মাইলের পর মাইল। হৃদয়ের জমিন অপচয় করেছি? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে আছে কিনা জানি না। শুধু বলি দেখুন করোনাকালীন সময়ে বিশুদ্ধ হওয়ার যে সুযোগ পেয়েছেন, সেই সুযোগ কাজে লাগাই চলেন। বুদ্ধিজীবীরা এখনও পুরনো মুখোশগুলো সব খুলে শেষ করতে পারেননি। তাদের নির্দেশনার অপেক্ষায় থেকে করোনাপূর্ব সভ্যতার শুধু অপচয়ই হয়েছে। নতুন পৃথিবী সেই অপচয়মুক্ত হোক।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION